আক্কাস মাহমুদ: পেশাদার বা শৌখিন আলোকচিত্রীদের হাতে হাতে এখন ডিএসএলআর ক্যামেরা। আর বেশির ভাগ মানুষের হাতে থাকা মুঠোফোনে আছে ক্যামেরা। ডিএসএলআর বা স্মার্টফোনের ক্যামেরা—ছবি তুলছেন কমবেশি সবাই। ডিএসএলআরে যেমন ভালো ছবি হয়, তেমনি কিছু কৌশল জানা থাকলে মুঠোফোনের ক্যামেরাতেও ভালো ছবি তোলা যায়।
ক্যামেরা যত ভালো, ছবিও তত ভালো! এ কথা কিছুটা সত্য তো বটেই। কিন্তু সাধারণ ক্যামেরা ব্যবহার করেও নান্দনিক ছবি তোলার উদাহরণ কম নেই। দামি ডিএসএলআর হোক আর মোবাইল ক্যামেরাই হোক, কিছু মৌলিক নিয়মের ধারণা থাকলেই দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলা সম্ভব। আবার অনেকে বলেন, নান্দনিক ছবি পেতে ভালো ক্যামেরার সঙ্গে সৃজনশীল দৃষ্টিও থাকতে হয়!
ডিএসএলআর এখন জনপ্রিয়
একটা সময় এসএলআর (এরপর ডিএসএলআর) ক্যামেরা শুধু পেশাদার আলোকচিত্রীরাই ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন অনেকেই ডিএসএলআর ক্যামেরা, সঙ্গে নানা রকমের লেন্স ব্যবহার করেন নিজ নিজ সাধ্যের মধ্যে। যার ডিএসএলআর কেনার আগ্রহ বা সামর্থ্য নেই, তার কাছেও এখন একটা স্মার্ট মোবাইল ক্যামেরা ফোন আছে।
ছবি তোলায় দেশের মানুষের আগ্রহ এখন ব্যাপক। কয়েক বছর আগেও ঢাকায় ভালো এবং বড় ক্যামেরার শোরুম ছিল মিতালী নামে ঢাকা স্টেডিয়ামে একটি দোকান। এখন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে আছে কম করে ৫০টি ক্যামেরার দোকান।
বাজারে এখন ক্যানন, নাইকন, সনি, ফুজি, পেনটাক্সসহ আরও অনেক ব্র্যান্ডের ডিএসএলআর ক্যামেরা পাওয়া যায়। শৌখিন আলোকচিত্রীরা একটা ভালো ক্যামেরার সঙ্গে কিট লেন্সই ব্যবহার করেন। কিট লেন্স মানে ১৮-৫৫ মিমি সাধারণ লেন্স। এই লেন্স দিয়েই একজন শৌখিন আলোকচিত্রী তাঁর সাধ্যমতো ভালো ছবি তুলতে পারেন, তবে এর সঙ্গে প্রয়োজনমাফিক আরও অন্তত দুটি লেন্স কিনলে ছবি তোলার সবই মোটামুটি সম্পন্ন করা যায়।
এই দুটি লেন্স হতে পারে পোর্ট্রেট ছবি তোলার জন্য ৮৫ মিমি প্রাইম কিনতে পারেন। এর সঙ্গে সাধ্যের মধ্যে একটা ৭০-২০০ মিমি বা ৭০-৩০০ মিমি একটা জুম লেন্স কিনতে পারেন। তাতে আপনি দূরের বস্তুরও ভালো ছবি তুলতে পারবেন।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা আছে, যার সবই ভালো! ক্যানন ও নাইকন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। হালের অনেক ক্যামেরা ব্যবহারকারী এখন সনি ক্যামেরা কিনছেন, কেউ ফুজি ক্যামেরা কিনছেন।
দেশে আজকাল ফটোগ্রাফি শেখার অনেক উন্নত মানের প্রতিষ্ঠান আছে। আপনি একটা বেসিক কোর্স করে নিতে পারেন, যাতে আপনি ফটোগ্রাফির প্রাথমিক ধারণাটা পেয়ে যাবেন, পড়তে পারেন ফটোগ্রাফির বইও, দেশে এখন ফটোগ্রাফির বই পাওয়া যায় প্রচুর। এই বইগুলো আপনার ফটোগ্রাফি শেখায় অনেক ভূমিকা রাখবে।
ক্যামেরা আছে, তাই ফোনটি স্মার্ট
আজকাল মোবাইল ক্যামেরায় সাংবাদিকতাও হয়। এখন বাজারে অত্যাধুনিক স্মার্টফোন পাওয়া যায়, এই স্মার্টফোনে দারুণ ফটোগ্রাফি হয়, এমনকি ভিডিওগ্রাফিও হয়। তার চেয়ে বড় খবর, এই স্মার্টফোনে বিয়ের সিনেমাটোগ্রাফিও হচ্ছে দেশে–বিদেশে। শুধু কেনার সময় আপনি ভালো করে পরখ করে কিনুন কোন মোবাইলে কী কী সুবিধা আছে।
নামীদামি ব্র্যান্ডের মধ্যে আইফোন, স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস, সনি, হুয়াওয়ে ইত্যাদি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের যেকোনোটা কিনতে পারেন, কেনার সময় দেখে নিন একটু বেশি জায়গা আছে কি না। দেখে নিন মেগাপিক্সেল ১৫–এর ওপরে কি না। ভালো ছবি তোলার জন্য অবশ্য মেগাপিক্সেল খুবই জরুরি নয়। কম মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়েও ভালো ছবি সম্ভব! মেগাপিক্সেল প্রয়োজন ছবি বড় করার জন্য।
জানতে হবে কারিগরি বিষয়
ফোনে ছবি তোলার সময় দুই হাতই ব্যবহার করা উচিত। ফোন দুই হাতে সুন্দর করে ধরতে হবে, স্থিরভাবে ধরে রাখাটা জরুরি। নতুবা ছবিটি ঝাপসা হয়ে যাবে, ফ্রেমিং ভালো হবে না। কাঙ্ক্ষিত বিষয়টিও কেটে যেতে পারে, গুরুত্বপূর্ণ কেউ বাদ যেতে পারে।
মোবাইল ফটোগ্রাফিতে জুম কম করাই ভালো, তাতে ছবি আরও ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। আমরা অনেক সময় সকালের আলোকরশ্মির ছবি দেখে মুগ্ধ হই। আমরা অবাক হয়ে ভাবি, মোবাইলে এত সুন্দর স্পষ্ট ছবি কীভাবে সম্ভব!
আপনাকে দিয়েও সম্ভব, আপনার চমৎকার একটি দৃষ্টি থাকলেই হবে! ক্যামেরা ছাড়াই আপনি রশ্মির দিকে ভালো করে তাকান। দেখুন মনোযোগ দিয়ে খালি চোখে যা দেখছেন তাই পাচ্ছেন কি না আপনার মোবাইল ক্যামেরার ডিসপ্লেতে? সময় নিয়ে দেখুন, কম্পোজিশন করুন, দেখবেন নান্দনিক রে বা রশ্মির ছবি আপনার হাতের মোবাইল ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে।
আজকাল সব দামি মোবাইল ফোন ক্যামেরাতেই ছবি সম্পাদনার অপশন থাকে, সেই সুযোগ আপনি নিতে পারেন আপনার প্রয়োজন ও পছন্দমতো। আপনি আপনার সৃষ্টিশীল চোখ দিয়ে সাদাসিধা একটি সাধারণ দৃশ্যকে অপরূপ করে অসাধারণ রূপ দিতে পারেন মুঠোফোনটি দিয়ে। শুধু থাকতে হবে সৃষ্টিশীল একটি অন্তর্দৃষ্টি।
সাধারণত ভোরবেলায় আলোর গতি তীক্ষ্ণ থাকে, তখন আলো–ছায়ার ছবি সামনের আলোতে অনেক দৃষ্টিনন্দন দেখায়। মোবাইল ক্যামেরায় পর্দাটা বড় হলে ভালো হয়। তাতে ছবি দেখতে এবং কম্পোজিশনে অনেক সুবিধা হয়।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ক্যামেরায় ফ্লাশ লাইট ব্যবহার না করাই ভালো। সব সময় সাধারণ স্টাইল বা গৎবাঁধা নিয়মে ছবি না তুলে নিজের মতো বা নিজস্ব স্টাইলে তুলুন, নিজের মধ্যে লুকায়িত প্রতিভাকে কাজে লাগান। দেখবেন ছবি তোলায় নিজের একটা স্টাইল তৈরি হয়ে গেছে।
বাড়তি সুবিধা
মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে এমন সব জায়গায় ছবি তুলতে পারবেন, যেখানে বড় ক্যামেরা নিয়ে যেতে পারবেন না। আপনার হাতেই যে স্মার্টফোনটি আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ছবি তুলতে, সঙ্গে রাখুন একটু ধৈর্য ও অনেকখানি সাহস।
লেখক: ফটোগ্রাফি চর্চার প্রধান নির্বাহী ও আলোকচিত্রী (সূত্র: প্রথম আলো)
Post a Comment