একটা দেশের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কর। এই কর নানা ধরনের হতে পারে। তার মধ্যে একটা হলো আয় কর। তাহলে আজকে আমরা জানবো আয় কর রির্টান কিভাবে দিতে হয়?
আপনি যদি বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় করেন, তবে কর দিতে হবে। করের হিসাব–নিকাশ সরল অঙ্কের মতো নয়। এই হিসাব কিছুটা ভিন্ন। আছে নানা ধরনের ছাড়। সেসব যোগ-বিয়োগ করে আপনাকে কর নির্ধারণ করতে হবে। আবার আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হলেই ওই টাকার ওপর একেক হারে কর আরোপ হবে। যেমন, আড়াই লাখ টাকার বেশি প্রথম ৪ লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর, পরের ৫ লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ কর। এভাবে যত আয় বাড়বে, করের হারও বাড়ে।
বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা, জীবননাশী রোগের চিকিৎসা খরচ, যাতায়াত, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শ্রমিক তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আয়ে কর ছাড় আছে। প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কর বিবরণী জমা দেওয়া যায়। এরপরে দিলে জরিমানা গুনতে হবে।
কোথায় কী কর:
চাকরিজীবী করদাতাদের মূল বেতন, বিশেষ বেতন, বোনাস, মহার্ঘ ভাতা—সবই করযোগ্য আয়। যেমন, কোনো চাকরিজীবীর মূল বেতন যদি মাসে ৩০ হাজার টাকা হয়, তাহলে বছর শেষে ওই ১২ মাসের মূল বেতন যোগ হয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা করযোগ্য আয়। যদি দুটি উৎসব মূল বেতনের সমান হয়, তাহলে আরও ৬০ হাজার টাকা যুক্ত হবে। মহার্ঘ ভাতা থাকলেও কর বিবরণীতে যোগ করতে হবে।
চাকরিজীবীদের বাড়িভাড়ায় কর ছাড় মিলবে। ওই চাকরিজীবী বাড়িভাড়া বাবদ ওই মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বা মাসিক ২৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম, তা করমুক্ত। ধরা যাক, একজন চাকরিজীবীর সারা বছরের মূল বেতন হলো ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ওই চাকরিজীবী বাড়িভাড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যাবে। একইভাবে ওই চাকরিজীবীর চিকিৎসাভাতায় ছাড় মিলবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম, সেটি। সে ক্ষেত্রে ওই চাকরিজীবী ৩৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাবেন।
বেতনের সঙ্গে নিয়োগকর্তা যাতায়াত বাবদ খরচ দেন। সেখানেও বছরে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিতে হবে না। তবে কোনো চাকরিজীবী যদি অফিস থেকে গাড়ি পান, তাহলে মূল বেতনের ৫ শতাংশ বা বছরে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে।
যদি আপনার হৃদ্রোগ, কিডনি, চক্ষু, লিভার ও ক্যানসারের মতো জীবননাশী রোগে ভোগেন, তবে সার্জারির খরচের জন্য আপনার অফিস যত টাকা দেবেন, তা পুরোটাই করমুক্ত। তবে কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এই সুবিধা পাবেন না।
অনেক চাকরিজীবী নিজের অফিসের ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড থেকে বিপদে-আপদে টাকা পান। এ ধরনের তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা পেলেও তা করযোগ্য নয়।
অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মীদের ছুটির বিপরীতে নগদ টাকা দিয়ে দেন। এ ধরনের ছুটি নগদায়নের টাকাও করমুক্ত। তবে তা বছরে ৬০ হাজার টাকার কম হতে হবে। অবসর গ্রহণের পর গ্র্যাচুইটি বাবদ আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
বাড়িভাড়া বাবদ পুরো আয়ের ওপর কর বসবে না। আবাসিক ভাড়া দিলে বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ দেখিয়ে রেয়াত মিলবে। বাণিজ্যিক ভাড়ার ক্ষেত্রে এই হার ৩০ শতাংশ। কোনো মাসে ফ্ল্যাট ভাড়া না হলে তা বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া বাদ যাবে পৌর কর, ভূমি রাজস্ব, গৃহনির্মাণের কিস্তির টাকা।
বিনিয়োগে কর রেয়াত :
বর্তমানে ৯টি খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত মিলবে। কর রেয়াত পেতে এসব খাতে একজন করদাতা বছরের মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান করতে পারবেন। ওই বিনিয়োগকারী করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগ ও দানের ১৫ শতাংশ কর ছাড় মিলবে। ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র ছাড়া আরও আটটি খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে আপনি কর ছাড় পাবেন। এগুলো হলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তারা প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা। এ ছাড়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা রাখলেও কর রেয়াত পাবেন। অর্থাৎ মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস রাখলে বিনিয়োগজনিত কর ছাড় মিলবে।
চেক লিস্ট :
কর বিবরণী জমা দিতে হলে বেশ কিছু কাগজপত্র দেখাতে হবে। সেগুলোর অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, সঞ্চয়পত্রের অনুলিপি, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
Post a Comment