রাজনীতি মানে নাকি রাজার নীতি। আর একটু বিশ্লেষন করলে আমরা বুঝি নীতির রাজা বা শ্রেষ্ঠ নীতি অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ নীতির আদর্শে যে নীতি গঠিত হয় সেটাই রাজনীতি। কিন্তু আমরা দেখছি রাজনীতি মানে নীতি-নৈতিকতাহীন নেতা ও রাজনীতি। রাজকীয় নীতি রাজনীতি থেকেই বের হয়। রাজনীতির সাথে নেতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। নেতা ছাড়া রাজনীতি কল্পনাই করা যায় নায়। যাদের হাত ধরে নীতি সংসদ ভবন থেকে বের হয়। তাদের থেকে যদি নীতি-নৈতিকতা নির্বাসন হয়। তাহলে দেশ ও জাতির কল্যান তো হবেই না, হবে দেশ ও জাতির গোরস্থান।
আসছে সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপনী অফারের মত নানা লোভনীয় অফার দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। রাস্তার বিলবোর্ড ছেয়ে গেছে তাদের নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে। এখন ভাববার বিয়য় আপনি কি তাদের প্রতিশ্রুতিতে ভুলে নীতিহীন নেতা নির্বাচন করবেন, না সৎ, যোগ্য নীতিবান নেতা নির্বাচন করবেন।
নির্বাচন এলে প্রার্থীরা যেমন গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দেন, তেমনি শোনা যায় তারা টাকার বস্তা নিয়ে হাজির হন ভোটারের দোর গোড়ায়। তখন তারা সবাইব্যস্ত থাকেন ধনী-গরীব,আবাল-বৃদ্ধ বনিতা সবার সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার। যার দিকে তারা কখন ফিরে তাকাতেন না তাদেরও তারা জাড়িয়ে ধরেন, বুকে টেনে নেন।
বিভিন্ন জাতীয় ও সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নানা ধরনের তথ্য গণমাধ্যমের কল্যানে সবার সামনে উন্মোক্ত। দেখা যায় প্রার্থীর আয়ের চেয়ে স্ত্রীর বা অন্য আত্মীয়- স্বজনের আয় বেশি। তার মানে কি দাঁড়ায় অবশ্যই সে আয়ের হিসাব গোপন রাখছে।
এছাড়াও নানা ধরনের দুর্নীতি, খুন, রাহাজানীর মামলাতো তার উপর আছেই। কারো কারো নামে দেখা যায় ভুমি দখল, সরকারী কোষাগারে রাখা গরীবের খাবার মেরে দেয়ার অভিযোগ।
আজকে রাজনীতির মাঠে নীতিহীন নেতার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশী। তারা বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজীসহ নানা ধরনের অপকর্মের মহোৎসব পালন করে। সমাজসেবার নামে ফটোবাজি করে সমাজের বারোটা বাজায় এসব রাজনীতির নামে ঘৃন দালালরা।
এমপি মন্ত্রীদের ছবির সাথে রঙচটা পোষ্টার ছাপিয়ে তারা বড় নেতা বনে যায়। অনুষ্ঠানের নামে চলে চাঁদা তোলার মহড়া। এসব নেতা স্বার্থের জন্য কারো পায়ে মাথা ঠেকাতেও দ্বিধা করে না। আবার স্বার্থের জন্য কারো কপাল ফাটাতেও দ্বিধা করে না।
কাম টু দ্যা পয়েন্ট, এ ধরনের নেতা কি আসলেই আপনার নেতা হওয়ার যোগ্য। সে কি থাকবে নির্বাচনের পর আপনার পাশে, নাকি সে নির্বাচন শেষে অচিনপুরে পারি জমাবে। কোন দিন খোঁজ খবর নিবে না। পাঁচ টাকার চা, দুই টাকা বিড়ি দিয়ে যদি আপনি ভোটটা অপাত্রে ফেলেন, তাহলে মনে রাখবেন আপনার এই সাত টাকা বিনিয়োগ করে সে কামাই করবে ৭ শত কোটি টাকা। সুতারং সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেবার।
নীতিহীন রাজনীতিকরাই রাজনীতিকে আরও বেশী কলুষিত করেছে। এরা খুবই ভঙ্গুর চরিত্রের এবং সমাজে এদের তিক্ততাই বেশী। আজকের নেতারা নীতির চর্চা করেন না তাইতো জাতি আজ নৈতিকতাহীন ও মেধা শূন্য হয়ে পড়ছে। তারা তাদের লাভের আশায় দেশের বারোটা বাজাতে একটু চিন্ত্ওা করছে না। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, খুনি,ছিনতাইকারী,মাদক ব্যবসায়ীরা যখন সমাজের নেতৃত্বে আসে তখন তারা মানুষের জন্য কি করবে? ধান্দাবাজদের নেতৃত্বে সমাজ কখনোই এগিয়ে যাবে না। তাই সমাজ থেকে এদের উৎখাত করতে হবে।
বাংলাদেশে মেধাবী সৎ, নীতিবান ভালো মানুষের অভাব নেই। যদি ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষ বেশী হত, তাহলে ঘরবাড়ির চেয়ে জেলখানা বেশী থাকত। আসল কথা হচ্ছে অল্প কিছু খারাপ মানুষের দাপটে ভালো মানুষেরা নিশ্চুপ। এছাড়াও যারা ভালো মানুষ সেজে বসে আছে। তারাও আসলে ভাল মানুষ নয়- ভালো মানুষের মত অভিনয় করা খারাপ মানুষের দল। এদের ভয়ে বসে থাকলে চলবে না। মনে আপনি একা কিন্তু সবাই মিলে একা নই। সাহস করে এগিয়ে আসুন সঙ্গী পাবেন।
অনেকে জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মেডেলের সোনা মেরে, রাজউকের প্লট গ্রাস করে, বনের গাছ কেটে, বনের ভূমি নিজের নামে লিখিয়ে, চুক্তিবদ্ধ খুন অথবা গুম করিয়ে, মাদক ও সোনার চোরাচালানি করে, চাঁদাবাজির মাধ্যমে জোঁকের মতো রক্ত শোষণ করে কেউ রক্ষা পেয়ে যাবে-এটা কি কোন সভ্য-গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহনযোগ্য হতে পারে? দেশের স্বার্থে, জনগণের মঙ্গলে, মানবতার স্বার্থে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন বজায় রাখার জন্য কোনটি উচিৎ আর কোনটি অনুচিৎ-এ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব কার? এ কথা ভাববার সময় কিন্তু এখনই।
মানুষ মাত্রই মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা, খাদ্যের স্বাধীনতা, পোশাকের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা চায়। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতি মেরুকরণ হতে এখন কোন দলের মধ্যেই সচরাচরভিন্নœ মতাবলম্বী পাওয়া যায় না। সবাই প্রায় এক চরিত্রের লোক। এখানে স্বাধীনভাবে কেউ ভাল মানুষ খুঁজতে চায় না। সবাই গা ভাসিয়ে সবার সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলে। এ ভাবেই আর কত দিন ?
যারা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন,মুরব্বিদের মতের বাইরে যাওয়াকেই গর্বের মনে করতো কিংবা পরিবারের অবাধ্য হয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য ঘর ছেড়েছেন তারাও এখন রাজনীতিতে এসে নানা ধরনের নীতি কথা বলছে। কেউ কেউ রাজনীতিতে এসেছে সন্ত্রাসীর মাধ্যমে। নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য এলাকায় ছিল বিখ্যাত। তারা এখন রাজনীতির ময়দানে মানবসেবায় নামছে।
তাই এখন সময় এসেছে আপনি কাকে আপনার নীতির কারিগর বানাবেন। কে আপনার নেতা হবে। পাঁচ টাকার চা, দুই টাকার বিড়ি কাছে আপনার বিবেককে কিকিয়ে দিবেন। না সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত লোক যদি আপনাকে কিছু নাও খাওয়াতে পারেন তাহলেও তাকে আপনার ভোটটা দিবেন, কারণ সে আপনাকে মনে রাখবে। আপনার জন্য কাজ করবে। আর যদি পাঁচ টাকার চা, পাঁচ শত টাকার কড়কড়া নোট, দুই টাকার বিড়িতে ভুলে যান বিবেক, তাহলে প্রস্তুত থাকুন এরা আপনার কিছুই কবরে এ ব্যপারে।
লেখক : সাংবাদিক ও লেখক
Post a Comment